Click On Ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

ইতিহাস কি বলে ?

    👉১৯৮৬ সাল। বাংলাদেশে পাহাড়ি বাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক হত্যাকান্ডের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নিজের জায়গা-জমি ছেড়ে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল হাজার হাজার জুম্মো পরিবারকে। বর্তমান সময়ের মতো সেই সময়ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে লুঠ করে নিয়েছিল পাহাড়িদের গরু,মহিষ,ছাগল,শুকর, সোনা-রুপা সহ আরো অনেক সম্পত্তি। আমার বাবার জীবন বেঁচেছিল নিজের গরু ও মহিষ পালের কারণে। বাবা বলতো,চারজন সেটেলার বাঙ্গালী তাকে আক্রমণ করেছিল, যখন বাবা গরু ও মহিষের পালকে নিরাপদ স্থান হিসেবে আমার মায়ের জায়গায় খাগড়াছড়ির কমল ছড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল । তাদের হাতে ছিল ধারালো দা। কিছু সময় যুদ্ধ করার পর বাবা আর তাদের সাথে না পেরে গরু ও মহিষের পালকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং প্রাণে বেঁচে যায়। সেই সময় আমার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর যার ফলে কিছুই মনে রাখতে পারিনি। এবং সেই ঘটনায় বাবার বড় ভাইকে বাঙ্গালীরা হত্যা করেছিল। এবং ১৯৮৬ সালের সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশুকে। বাবা-মা, মুরুব্বীদের মুখ থেকে একথা বহুবার শুনেছি।

ছবিঃ চিম্বুক পাহাড়ে ৫ তারকা হোটেল স্থাপনের প্রতিবাদে লংমার্চ।

১৯৯২ সাল ১০ই এপ্রিল। সেই সময় লোগাং-এ  বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এবং বাঙ্গালীরা মিলে গণহত্যা চালিয়েছিল। সেই হত্যাকান্ডে ৩০০ জন নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৭০০টি ঘরবাড়ি। আমরা অনেকেই এই লোগাং গণহত্যার কথা জানি। বিশেষ করে আরো বেশী জানে আমাদের আঞ্চলিক দলের নেতৃবৃন্দরা।

রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালি উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের ১৯৮০ সালের ২৫শে মার্চের হত্যাকান্ডের কথা নিশ্চয় অনেকেই জানেন? ইতিহাসে এটি কলমপতি হত্যাকান্ড হিসেবে পরিচিত।

উক্ত কলমপতি হত্যাকান্ডেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল অসংখ্য নারী পুরুষকে। যদিও কিছু ব্লগে ৩০০ জনের মত উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সঠিক অর্থে তার হিসাব আজও পাওয়া যায়নি। এসব তথ্য হয়ত বা আমাদের আঞ্চলিক দলদের কাছে থাকার কথা।

এবার আসা যাক ১৯৮৯ সালে ৪ মে লংগদু গণহত্যার আলোচনায়। অন্যান্য সাম্প্রদায়িক গণহত্যার মত লংগদুতেও অনেক পাহাড়ি নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। ভাঙচুর করা হয়েছিল অনেক বুদ্ধ মুর্তীকে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। লুঠ করা হয়েছিল পাহাড়িদের সম্পত্তি।

উক্ত গণহত্যাগুলো বাদেও পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে একথা আমাদের কারোর অজানা নয়। আমরা এসব ঘটনা কখনো দেখেছি দুচোখে আবার কখনও বা জেনেছি বই পড়ে। 

এবার আসি মূল বিষয়েঃ

উপরোক্ত ঘটনাগুলো অনেক আগেই ঘটে গিয়েছে। আমরা অনেক প্রিয়জন, মেধাবী নারী-পুরুষ হারিয়েছি। খালি হয়েছে অনেক মায়ের কোল, অনেক মা বোন হয়েছে বিধবা। আমরা আমাদের ভাইকে নিজ হাতে করেছি খুন,হত্যা। 

কিন্তু এখান থেকে আমরা কি শিখতে পেরেছি?  প্রশ্নটা আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের চার আঞ্চলিক সংগঠনের কাছে। 

আপনারা ( চার সংগঠন ) সবাই বলেন যে, জুম্মো জাতির মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনারা এরকম ভ্রাতৃঘাটি সংঘাটকে কেন জিইয়ে রেখেছেন তাহলে ? 

১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি হওয়ার ২৩ বছরেও আজো শত শত পরিবার তারা তাদের বাব দাদার ভিটে মাটিতে এখনো যেতে পারেনি একথা আপনারা জানেন। তবে কেন এই ভ্রাতৃবিরোধ? সোসিয়াল মিডিয়ায় অনেক ব্লগার, অনেক লেখক, অনেক প্রগতিশীল সাংবাদিক এসব বিষয়ে অবশ্যই লিখেছেন এবং এখনো লিখে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্তে এখনও অটল রয়েই গেছেন। তাহলে অতীত ঘটনাগুলি কি আপনাদের কারোর মনে নেই? 

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে মূল্যায়ন করে অনেকেই পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। বর্তমান প্রজম্ম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আন্দোলন থেকে। কেন? এর উত্তর একটাই। সেটা হলো আপনাদের ভ্রাতৃঘাটি সংঘাত। আপনারা এসব বিষয় নিয়ে কখনো ভেবে দেখেন নি? একদিকে রাষ্ট্রীয় পৃৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়িদের জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে আর অন্যদিকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে হাজার হাজার পাহাড়ি পরিবার। এবং আমাদের পাহাড়ি নারীরাও বেজাতি বিয়ে করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যা একটি জাতির জন্য ভয়ঙ্কর রুপে পরিণত হতে চলেছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় একতা।

    সুতরাং আমাদের আর সময় নেই। পেছনের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই আসুন আমরা অতীতকে স্মরণ করে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাই। ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, কোনো শাসক শ্রেণী এমনিভাবেই স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে, সার্বভৌমত্ব দিয়েছে। এভাবেই যদি আমরা দিন অতীত করতে থাকি তাহলে আমরা আর কোনোদিন বেরিয়ে আসতে পারবোনা। 

তাই আসুন আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অর্জন করে নিই আমাদের অধিকার।

শেয়ার করুন জানার জন্য একতার জন্য। ধন্যবাদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ