👉দয়া একটি মহৎ গুণ। এই গুণটির অধিকারিকে বলা হয় “ দয়াবান ’’। মানুষ দয়াবান হইতে পারে কিন্তু “ দয়াময় ’’ হইতে পারেনা। কেননা মানুষ যতই ঐ গুণের অধিকারি হউক না কেন উহাতে পূর্ণতা লাভ করিতে পারেনা। আর ঈশ্বর ঐ গুণে পূর্ণ, তাই তাহার একটি নাম “ দয়াময় ’’।
কোন ব্যক্তি যদি একজন ক্ষুধার্তকে অন্নদান ও একজন পথিকের মাল লুণ্ঠন করে, একজন জলমগ্নকে উদ্ধার করে ও অন্য কাউকে হত্যা করে অথবা একজন গৃহহীনকে গৃহদান করে এবং অপরের গৃহ করে অগ্নিদাহ - তবে তাহাকে “ দয়াময় ’’ বলা যায় কি ? হয়ত ইহার উত্তর হইবে - না। কিন্তু উক্তরুপ কার্যকলাপ সত্বেও ঈশ্বর আখ্যায়িত আছেন “ দয়াময় ’’ নামে। এখন সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা যাইতেছে।
জীবজগতে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক বিদ্যমান। যখন কোন সবল প্রাণী দূর্বল প্রাণীকে ধরিয়া ভক্ষণ করে, তখন ঈশ্বর খাদকের কাছে “ দয়াময় ’’ বটে কিন্তু তখন তিনি কি খাদ্য প্রাণীর কাছেও “ দয়াময় ’’? যখন একটি সর্প একটি ব্যাঙকে আস্তে আস্তে গিলিতে থাকে, তখন তিনি সর্পটির কাছে “ দয়াময় ’’ বটে কিন্তু ব্যাঙটির কাছে নির্দয় নহেন কি ? পক্ষান্তরে তিনি যদি ব্যাঙটির কাছে সদয় হন, তবে সর্পটি অনাহারে মারা যায় না কি ? ঈশ্বর এক জীবকে অন্য জীবের খাদ্য নির্বাচন না করিয়া নির্জীব পদার্থ অর্থাৎ সোনা, রুপা, তামা, মাটি, পাথর ইত্যাদি নির্বাচন করিতে পারিতেন কি না ? না পারিলে কেঁচোর খাদ্য মাটি হইল কিরুপে ?
👉 ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবেরা সকলেই তাহার দয়ার সমানাংশ প্রাপ্তির দাবিদার। কিন্ত তাহা পাইতেছে কি ? খাদ্য সম্বন্ধে বলা যায় যে, ঈশ্বর মানুষের জন্য চর্ব, চোষ্য, লেহ্য, পেয় ইত্যাদি অসংখ্য রকম খাদ্যের ব্যবস্থা করিয়াছেন এবং পশু-পাখিদের জন্য বরাদ্দ করিয়াছেন ঘাস-বিচালী, পোকা-মাকড় আর কুকুরের জন্য বিষ্ঠা। ইহাকে ঈশ্বরের দয়ার সমবন্টন বলা যায় কি ?
👉 কাহারও জীবন রক্ষা করা যদি দয়ার কাজ হয়, হত্যা করা হয় নির্দয়তার কাজ, তাহা হইলে খাদ্য-খাদক ব্যাপারে ঈশ্বর ‘ সদয় , এর চেয়ে “ নির্দয়ই ‘ বেশী। তবে কতগুণ বেশী তাহা তিনি ভিন্ন অন্য কেহ জানে না। কেননা তিনি এক একটি জীবের জীবন রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অসংখ্য জীবকে হত্যা করিয়া থাকেন। কে জানে একটি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য তিনি কয়টি মাছ, মোরগ, ছাগল ইত্যাদি হত্যা করেন ? কে জানে তিনি একটি শৌল, গজাল, বোয়াল মাছ এবং একটি বক পাখির জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে কয়টি চুনো মাছ, হত্যা করেন ? আমিজভোজী জীবদের প্রতি ঈশ্বরের এত অধিক দয়া কেন ? তিনি কি হতভাগাদের “ দয়াময় ’’ নহেন ?
👉 বলা হইয়া থাকে যে, মানুষ ঈশ্বরের সখের সৃষ্ট জীব। তাই মানুষের উপর তাহার দয়া-মায়াও বেশী। কিন্তু মানুষ ভেদে তাহার দয়ার তারতম্য কেন ? ঈশ্বর দয়া করিয়া সকল মানুষকেই প্রাণদান করিয়াছেন এবং দান করিয়াছেন ক্ষুধা-তৃঞ্চা ও সুখ-দুঃখের অনুভূতি সমান মাপে। অথচ মানুষের জীবিকা নির্বাহের কোন ব্যাপারেই ঈশ্বরের দয়ার সমবণ্টন নাই কেন ? কেহ সুরম্য হর্মে বাস করে সাততলায় এবং কেহবা করে গাছতলায়। কেহ পঞ্চামৃত ( দুগ্ধ,দধি,ঘৃত, মধু, চিনি ) আহার করে কেহ জল-ভাতে শুধু লবণ ও লঙ্কাপোড়া পায়না কেন ? কেহ লম্প-ঝম্প ও দৌড় প্রতিযোগীতায় রেকর্ড করে , কেহ মল্ল যুদ্ধে পদক পায়; আবার অন্ধ, খঞ্জ, বিকলাঙ্গরা রাস্তায় বসিয়া অন্যের পায়ে আঘাত পায়। ঈশ্বরের দয়াবন্টনে এরুপ পক্ষপাতিত্ব কেন ? আর ভাগ্য বলিয়া কিছু আছে কি না ? থাকিলে কাহারও ভাগ্যে চির শান্তি নাই কেন ? ভাগ্যের নিয়ন্তা কে ?
👉 কাহারও জীবন রক্ষা করা দয়ার কাজ বটে , কিন্তু কাহাকেও বধ করা দয়ার কাজ নহে। বরং উহা দায়হীনতার পরিচয়। জগতে জীবের বিশেষত মানুষের জম্ম সংখ্যা যত, মৃত্যু সংখ্যা তত। সুতরাং জম্ম ও মৃত্যুর ব্যাপারে ঈশ্বর যেই পরিমাণ সদয়, সেই পরিমাণ নির্দয়, অর্থাৎ ঈশ্বরের সদয়তা ও নির্দয়তার পরিমাণ এক্ষেত্রে সমান।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কেহ কেহ মনে করেন যে, ঈশ্বর সদয়ও নহেন এবং নির্দয়ও নহেন। তিনি নিরাকার নির্বিকার ও অনির্বচনীয় এক সত্তা। যদি তাহা নাই হয়, তবে পৃথিবীতে শিশু মৃত্যু , অপমৃত্যু, এবং ঝড় বন্যা, মহামারী, ভুমিকম্প ইত্যাদি প্রাণহাণিকর ঘটনাগুলির জন্য তিনিই কি দায়ী নহেন ?
1 মন্তব্যসমূহ
Asole ki tai ?
উত্তরমুছুন